রূপা ভট্টাচার্য্য
মিশরের পিরামিড পৃথিবীর ৭ম আশ্চর্য্য-র মধ্যে অন্যতমসারা পৃথিবীতে এই পিরামিড নিয়ে চর্চা বহু বছর ধরে চলছে।এই পিরামিড মিশরের ফারাওদের অতুলনীয় কীর্তি। পিরামিড নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।
পিরামিড নিয়ে বহু গল্প কথিত আছে।পিরামিড তৈরী হয় আনুমানিক ২৭৮০খ্রীঃপূঃ।আকার আকৃতির দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় হল গিজা'র পিরামিড।এটি সম্ভবতঃ খ্রীঃপূঃ ২৬৮০-২৫৬০ এই সময় তৈরী।
মিশরের পিরামিড গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হল তুতেনখামেনের সমাধি।এই প্রায় হারিয়ে যাওয়া সমাধিটির আবিষ্কার নিঃসন্দেহে একটি বড় আবিষ্কার।নীল নদের তীরে ভ্যালী অব্ কিংস্ নামের এই উপত্যাকায় ১৯২২ সালে বৃটিশ ভূ-তাত্তিক জন কারনারভন এবং হাওয়ারড কারটার এই সমাধি খুঁজে বের করেন।এই সমাধি খুঁজতে জন কারনারভন এবং হাওয়ারড কারটার এর আনুমানিক দশ বছর সময় লাগে।
Tomb of Tutankhamun in Valley of the Kings, Luxor, West Bank, Egypt, May 2005.

ভ্যলী অব্ কিংস-এ তুতেনখামেনের সমাধি।
ফারাও তুতেনখামেনের ব্যাপারে বিশেষ কিছুই জানা যায়না।তাঁর রাজত্বকাল আনুমানিক ১৩৪২-১৩২৫ খ্রীঃপূঃ।মাএ ৯বছর বয়সে ফারাও পদে তাঁর অভিষেক হয়।প্রথমে তাঁর নাম ছিল তুতেনখাটেন।পরে তিনি "আমুন" উপাধি গ্রহণ করে তুতেনখামেন হন।তিনি ছিলেন ফারাও আমেনহোটেপ ও আংখেনাটেনের পুএ।তিনি নিজের সৎ বোন ও আমেনহোটেপ এর তৃতীয় কন্যা আংখেসেনামুন কে বিয়ে করেন।মাএ ১৮ বছর বয়সে শিকার করতে গিয়ে এই ফারাওএর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু ঘটে।তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নানাজন নানামত পোষণ করেন।তাঁর মৃত্যুর প্রায় ৩৫০০ বছর পরে তাঁর এই বহু চর্চিত সমাধি আবিষ্কৃত হয়।
এই সমাধির ভিতরকার বিপুল ধনরাশি আর ভিতরকার শিল্পকলা আবিষ্কারক দের নজর কেড়েছিল।এর ভিতর সবচেয়ে বেশি প্রশংসার দাবী রাখে কফিনের উপরকার সোনার মুখোশটি।এছাড়া পিরামিডের ভিতরকার কক্ষ গুলি প্রচুর সোনার জিনিস দিয়ে ভরতি ছিল।ভিতরকার সব জিনিসপএ সরাতে মিশরীয় সরকারের আড়াইবছর সময় লেগেছিল।সব সমপত্তির সঠিক লিসট বানানো হয়েছিল এবং প্রমাণের জন্য সব জিনিসপএর ছবি তোলাও হয়েছিল। একজন ফারাও তাঁর জীবনকলে যা যা জিনিসপএ ব্যবহার করতেন সেইসব খুঁটিনাটি জিনিসপএ মায় একটি সোনার রথ সবই রাখা ছিল এই পিরামিডের ভিতর।প্রাচীন মিশরীয়রা মনে করত মৃত্যুর পরেও ফারাওরা আরো একটা জীবনে
প্রবেশ করেন যেখানে তাঁদের আগেকার সব জিনিসই প্রয়োজন হয়।তাই মমির সাথে এই সবই রাখা থাকত।
তুতেনখামেনের কফিনের পাশে তিনটি কন্যা ভ্রূণের কঙ্কাল পাওয়া যায়।অপরিণতকালে ভ্রূণগুলির মৃত্যু হয়েছিল বলে মনে করা হয়।কন্যাগুলি যে তুতেনখামেনের ই ছিল তারও প্রমাণ পাওয়া গেছে।তুতেনখামেনের কফিন এর উপর প্রাচীন হাইরোগ্লিফিক লিপিতে লেখা ছিল"যে এই পবিএ সমাধিতে যে প্রবেশ করিবে তৎক্ষণাৎ তার মৃত্যু হবে"।তুতেনখামেনের কফিন খোলার পর তাঁর মমির উপর একটি ফুলের তোড়া পাওয়া যায়।এই তোড়াটি ৩৫০০বছর পরেও অবিকৃত ছিল।এর থেকে মনে করা হয় যে প্রাচীন মিশরীয়দের কফিনেও ফুলের তোড়া দেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল।
তুতেনখামেনের মৃত্যুর সাথে সাথে তাঁর বংশ ও শেষ হয়ে যায়।কারণ ইতিহাসে তুতেনখামেনের বংশ সম্পর্কে আর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের আগে এই তরুণ ফারাও এর কথা অজানাই ছিল।কারণ তুতেনখামেন তাঁর রাজত্বকালে উল্লেখ্য কিছুই করে যেতে পারেননি।সম্ভবতঃ সেই জন্যই তিনি ইতিহাসে ব্রাত্যই থেকে গেছেন।প্রায় দশ বছর নিষ্ফল খোঁড়াখুঁড়ির পর অবশেষে ১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টার ষষ্ঠ রামেসিসের সমাধির পাদদেশ থেকে একটি সিঁড়ি নিচের দিকে যেতে দেখেন।উৎসাহিত হয়ে খুঁড়তে খুঁড়তে সিঁড়ির শেষ ধাপে একটি ডিম্বাকৃতি শীল করা দরজা দেখতে পান।কয়েকজন ভাষাতত্ত্ববিদ্ শীলের মধ্যে তুতেনখামেনের নাম খোদাই করা দেখতে পান।এবং দরজার ঠিক উপরে প্রাচীন মিশরীয় দেবতা আনুবিসের একটি মূর্তি ছিল।অন্যান্য সমাধি অপেক্ষা এটি আকারে অনেক ছোট ছিল।এর মধ্যে মোট চারটি কক্ষ ছিল।প্রথম তিনটি কক্ষ প্রচুর ধনরত্ন দ্বারা পূর্ণ ছিল।আর সর্বশেষ কক্ষটিতে তুতেনখামেনের সমাধি রাখা ছিল।এই সমাধি আবিষ্কার ইতিহাসের একটি বড় আবিষ্কার।
আগেই বলা হয়েছে তুতেনখামেনের মৃত্যু নিয়ে মতভেদ আছে।তুতেনখামেনের দেহ সমাধি থেকে তোলবার পর জাহি হাওয়াস্ নামের ঈজিপ্টোলিস্ট তুতেনখামেনের দেহের ময়নাতদন্ত ও মাথার স্ক্যানিং করান।তাতে তুতেনখামেনের পায়ের ফিমার বোন্ ভাঙা ও মাথার স্কালপ্ ফাটা দেখা যায়।এর থেকে তুতেনখামেনের মৃত্যুর সঠিক কারণ বোঝা যায়না।কারোর মতে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।আবার কারোর মতে ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।সুতরাং তাঁর মৃত্যুর কারণ পুরোটাই অনুমান সাপেক্ষ।
(referrenced from different magazine)
|